বিচিত্র অভিজ্ঞতার একরাত!


  • রফিকুল ইসলাম সাগর 
প্রতিকী ছবি
বন্ধু সুমন রাত ১১টায় ফোন করে বলল, তার এক আত্বীয়কে কালিগঞ্জ নামিয়ে দিয়ে আসতে যাবে। আমি সাথে যেতে পারব কিনা জানতে চাইল। আমি মুহুর্তেই রাজি হয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে পরলাম। ঘুরতে যাওয়ার ব্যাপারে আমার আবার অন্যরকম নেশা। সুমনের নিজের প্রাইভেট কার। আমাকে বাড়ীর সামনে থেকে এসে নিয়ে গেল। গাড়িতে বসে সুমনের আত্বীয়র সাথে পরিচিত হলাম। নাম জমির। আমাদেরই সমবয়সী। 
গাড়ি ড্রাইভ করেছে সুমন। পূবাইল পার হওয়ার পর পুলিশের চেক পোস্ট। সেখানে একটি দামী কালো গাড়ি থামানো দেখতে পেলাম। গাড়ির বাইরে দুইটা ছেলে একটা মেয়ে। যদিও আমাদের গাড়ি পুলিশ থামতে সিগনাল দেয়নি। আমরা নিজে থেকেই গাড়ি রাস্তার পাশে চাপিয়ে নামলাম জানতে কাহিনী কি! একজন পুলিশকে জিজ্ঞাসা করলাম, মামা কি হইছে? কাহিনী কি? উত্তরে জানলাম গাড়িতে 'মাল' পাওয়া গেছে (মাল মানে মাদক দ্রব্য)। আমরা আর সময় নষ্ট না করে গাড়িতে উঠলাম। চলতি পথে জমির এলাকায় তার প্রভাব সম্পর্কে গল্প করছিল। তার কথাবার্তায় বুঝে নিলাম ব্যাটার ক্ষমতা আছে। সে একটা কথা বারবার বলছিল যে, 'এলাকায় আমগো উপরে কোনো নেতা নাই। আমরাই সব'। কথার মাঝে জমিরের মোবাইলে একটা ফোন এলো। ফোনে যার সাথে কথা বলছে তাকে সম্ভবত কোনো একটা কাজে পাঠিয়েছে, কিন্তু লোকটা তা করতে ব্যর্থ হয়েছে। এপাশ থেকে জমির একটা কথা বারবার বলছিল 'মিডিয়া কর', মিডিয়া কইরা কামডা যেমনেই হউক শেষ কইরা আয়। এখানে 'মিডিয়া কর' মানে হচ্ছে কাজটা যে পারবে তার সাথে যোগাযোগ কর। জীবনে প্রথম আমি 'মিডিয়া কর' টাইপের ডায়লগ শুনলাম। এই মিডিয়া কর শব্দটা আমার দারুন পছন্দ হয়েছে। 
চলতে চলতে নানান রকমের কথায় কথায় এর মধ্যে আমরা গৌন্তব্যে পৌছালাম। গাড়ি থেকে নেমেই দেখলাম একটি ছেলে দাড়িয়ে আছে। জমির ওর সাথে পরিচয় করিয়ে দেয় বন্ধু বলে। আরও বলে, 'এই এলাকায় আমরা দুজনেই সব। এইখানে যদি এখন পুলিশের গাড়ি আসে আমগো দুইজনকে দেখলে সালাম দিয়া চইলা যাইব।' সাথে জমিরের বন্ধুটাও তাল মিলিয়ে বলল, 'আপনেরা মিয়া এইহানে অহন কাউরে মার্ডার করলেও পুলিশ আমারে দেখলে আপনেগরে ছাইরা দিব। আমার নাম মুন্না।' আমি বললাম, আরে কি কন! মার্ডার করব কারে? মুন্নার হয়ে জমির উত্তর দেয়, আরে কথার কথা কইল আরকি। 
মনে মনে ভাবলাম, খাইছে কি ক্ষমতা। তবে জমিরের কথাবার্তা শুনে আমার সব বিশ্বাস হলেও মুন্না ছেলেটার সব কথাই কেমন যেন চাপা চাপা মনে হচ্ছিল। ওর চেহারা আর পড়নের পোশাক দেখে কোনভাবেই মিলাতে পারছিলাম না ওর এতো ক্ষমতা। চেহারা দেখলেই বুঝা যায় বয়স একেবারে কম এবং কথাবার্তার মধ্যেও একটা বাচ্চামি ভাব প্রকাশ পায়। আমি আর সুমন কানাকানি করলাম, মনে হয় সব চাপা মারছে।
ঘড়ির কাটায় তখন রাত ১টা কি তার একটু বেশি। ঘুটঘুটে অন্ধকার। পিচঢালা পথ থেকে প্রায় পঞ্চাশ কদম সামনে একটি বাড়ি দেখা যাচ্ছে। উঠোনে লাইটের আলো। চারিদিকে ঝিঝি পোকা ডাকছে। আমরা ঢাকা ফেরার জন্য দুজনের কাছে বিদায় চাইলাম। কিন্তু না ওরা এখন, আমাদের যেতে দিবেনা। দুজনের আবদার, গরিবের বাসায় যেতে হবে। আমরা আপত্তি করলাম। বললাম, নাহ এতো রাতে কারো বাড়িতে যাব না। এরপর জমির সামনের বাড়িটি দেখিয়ে বলল, 'আইচ্ছা ঠিক আছে আসেন এইটা আমার চাচার বাড়ি। চাচা যাইগ্গা আছে। চাচার ঘরে গিয়া বসি। নাইলে খুব কষ্ট পামু।' পাশ থেকে মুন্না বলল, 'ভাই আমরা হারারাইত ঘুমাই না। সহালে বাড়িত গিয়া ঘুমাই।'
সুমন গাড়ি রাস্তার পাশে চাপিয়ে রাখল। বাড়ির দিকে এগিয়ে যাওয়ার আগে সুমন মুন্নাকে প্রশ্ন করলো, গাড়ি এখানে রাখলে কোনো সমস্যা নেইতো? মুন্না খুব ভাব নিয়ে উত্তর দিল, আরে নাহ গাড়ি কেউ দরত না। আপনেরা মুন্নার কাছে আইছেন বুঝলেন। গাড়ি কেউ নিলে আপনেরে আমি জরিপানা দিমু (একটু জোর গলায় বলল)। এবার সুমন নিশ্চিন্ত মনে বলল, চলেন। 
বাড়িতে ঢুকতে পথের দুপাশে সুপারি গাছ। সাথে সাইডে বড় বড় গজারী গাছ। হেটে বাড়ির ভেতরে ঢুকলাম। একটি ঘরের দরজার এপাশে দাড়িয়ে জমির ডাক দেয়, কাকা...। ভেতর থেকে সাথে সাথেই উত্তর, কেডা? জমির উত্তর দেয়, আমি জমিরে দরজা খোল। ঢাকা থেইকা মেমান আইছে। 
দরজা খুললেন একেবারে চিকন-চাকন আকৃতির একজন লোক। চোখে চশমা। তিনি সম্ভবত লেখা পড়তে চশমা ব্যবহার করেন। ঘরে ঢুকে দেখতে পেলাম তার হাতে কিসের যেন একটা কাগজ। সম্ভবত কাগজের লেখা গুলো পড়ছিলেন। আমাদের দেখে কাগজটা বিছানার পাশে একটা টেবিলে রাখলেন। তারপর চোখের চশমাটা খুলে সেই কাগজের উপর রাখলেন। এবার জমির চাচার সাথে আমাদের পরিচয় করিয়ে দিল। চাচা আমাদের বসতে বললেন। বিছানার উপর উঠে বসলাম। 
জমির চাচা সম্পর্কে বলতে শুরু করে, 'এইযে আমার কাকা হের সাথে আমি পুরা ফ্রি মাইন্ডে চলি। একবারে বন্ধুর মতো। আমার কাকা এই পুরা গ্রামের সবচেয়ে বড় নেতা। দুইবার বলল, সভাপতি সভাপতি। হেয় খালি একটা ফুন মারব এক্ষণ পুলিশ আইব।' 
একটা ব্যাপার খেয়াল করলাম-জমির ও মুন্না দুজনেই প্রথম থেকেই বারবার পুলিশ পুলিশ করছে। তো এরপরে কথার মাঝে চাচার মোবাইলে ফোন এলো। তিনি রিসিভ করে কথা বলছেন। আমরা চুপচাপ বসে সবাই শুনছি। বুঝলাম ফোনে কেউ তার সাথে মামলা সংক্রান্ত ব্যাপারে কথা বলছে। কেউ একজন মামলা করেছেন যার নামে মামলা করেছেন তাকে পুলিশ বাড়ি থেকে ধরে নিয়ে গেছে। 
ফোনে চাচা কিছু কথা বললেন এরকম, 'মামলা করতে ট্যাকা কতো দিছে? খবর পাইছত? দশ হাজার ট্যাকা! মামলা করতে দশ হাজার ট্যাকা লাগে নাকি? আমারে এক হাজার ট্যাকা দিলেই এমন মামলা করাইতাম আর বাইরন লাগত না। থাক হেগো ট্যাকা বেশি অইয়্যা গেছে দিছে।' বলে কথা শেষ করলেন। 
আমি জমিরের চাচার দিকে তাকিয়ে ভালোভাবে তাকে দেখলাম। কোনভাবেই তাকে আমার দৃষ্টিতে নেতা নেতা মনে হচ্ছিল না। আবার মনে করলাম নাহ! লোকটা অনেক বড় নেতা হলেও হতে পারে। গ্রামের নেতা তো। 
এরমধ্যে জমির তার এক বন্ধুকে ফোন করে বলল, 'ঢাকা থেইক্কা মেমান আইছে খাওনের কিছু নিয়া আয়। এক্ষণ আবি। দেরী করবি না। তুই তর ট্যাকা দিয়া নিয়া আয়, আইলেই আমি দিয়া দিতাছি।' আমি প্রশ্ন করলাম, এতো রাতে দোকান খোলা পাবে? সাথে সাথেই মুন্নার উত্তর, খুলা না থাকলেও খুলাইব। 
প্রায় ঘন্টা খানেক পর মোটর সাইকেল চালিয়ে একজন বাড়ির ভেতর ঢুকলো। তখন জমির ঘর থেকে বের হলো। মিনিট পাঁচেক পর মোটর সাইকেল স্টার্ট দেয়ার শব্দ শুনলাম। বুঝতে পারলাম মোটর সাইকেল চালিয়ে যে এসেছিল সে জমিরের সাথে কথা বলে চলে গেল। জমির ঘরে ঢুকলো। ওর চেহারায় একটু রাগ রাগ ভাব খেয়াল করলাম। ঘরে ঢুকেই জমির চাচার কাছে নালিশ করলো, 'চাচা, সবুইজ্জার কামডা দেখছেন এতক্ষণ পরে আইয়্যা কয় হের কাছে ট্যাহা নাই। এই কয়ডা ট্যাহা হের কাছে নাই? ওরে কি কেউ বাকিও দিতনা? আমার কাছ থেইকা আইয়্যা ট্যাহা নিয়া গেল।' 
জমিরের নালিশ শুনে চাচা বললেন, 'সবুইজ্জার কাছে ট্যাকা থাকব কেমনে! সারাদিন জুয়া খেলে। ঘরের সব জিনিস জুয়া খেইল্লা বেচ্ছে। দেখ অহন আবার গিয়া জুয়া খেলতে বইছে।' চাচার এসব কথা শুনে সবুজের মোবাইলে ফোন করে জমির। ওপাশ থেকে রিসিভ করেনা। অসংখ্য বার ট্রাই করার পর প্রায় মিনিট বিশেক পর ফোন রিসিভ করলো। বলল, পাচ মিনিট লাগবে আসতে। পাচ মিনিট পেরিয়ে ত্রিশ মিনিট হয়ে গেল সবুজের কোনো খবর নাই। ফোন করলে রিসিভ করেনা। একঘন্টা পর আবার ফোন রিসিভ করলো। এবার বলল, এইতো আর দুই মিনিট লাগবে। দুই মিনিট শেষ হলো আরও একঘন্টা পর। মোটর সাইকেলের আওয়াজ শুনে মুন্না বলল, আইছে...। একটা ছেলে ঘরে ঢুকলো। এই ছেলেটার নামই সবুজ। মুন্নার হাতে একটা পলিথিনের ব্যাগ ধরিয়ে দিয়ে 'একটু কাম আছে। আইতাছি।' বলে সে কেটে পড়ল। 
ব্যাগের ভেতর থেকে মুন্না দুই প্যাকেট বিস্কুট আর এক লিটার প্রাণ আপ এর বোতল বের করে আমাদের দিকে এগিয়ে দিয়ে বলল, ভাই নেন খান। বিস্কুট খাওয়া শুরু করলাম। চাচা একটি বিস্কুট হাতে নিয়ে কয়েক লাইন জ্ঞানের কথা বললেন। কথা গুলো হলো- 'এই যে আমরা প্রত্যেক দিন ভাত, মাছ, মাংশ, তরকারি খাই। প্রথমে বাজার কইরা আনন লাগে। আননের পরে মহিলারা ছুইলা-কাইডা, ধুইয়্যা এগুলা চুলার সামনে হাজির করে। পরে চুলাত বহায়। এরপরে রান্ধন অয়। তারপরে গিয়া প্লেটে কইরা আমগো সামনে দেয়। এতো কষ্ট কইরা জিনিসটা তৈয়্যার অয়। খাইতে কিন্তু লাগে মাত্র পাচ মিনিট।' চাচার এমন উদহারণ দেয়ার কারণ বুঝতে আর বাকি রইলো না। 
খাওয়া শেষ করে আমি আর সুমন ঢাকা ফেরার জন্য ব্যস্ত হয়ে পরলাম। চাচার কাছে বিদায় নিলাম ঘরের ভেতরেই। জমির আর মুন্না আমাদের এগিয়ে দিতে বাড়ির বাইরে বেরিয়ে গাড়ি পর্যন্ত এলো। ঠিক তখনি অনেকটা দূরে একটা গাড়ির হেড লাইটের আলো চোখে পড়ল আমাদের সবার। দূর থেকে ঠিক বুঝা যাচ্ছিল না গাড়িটা কোন ধরনের। গাড়িটা আমাদের দিকে এই পথেই আসছে। এই মুহুর্তে জমির তারাহুরা করে আমাকে আর সুমনকে বলল, ভাই আপনেরা একটু বাড়ির ভিতরে যান। আমি বললাম, কোনো সমস্যা? জমির বলল, না সমস্যা না। একটু পরে যান। এখন চাচার ঘরে যান। ফোন করলে বাইরইবেন। 
কথা না বাড়িয়ে আমি সামনে সুমন পিছনে বাড়ির ভেতরে যেতে হাটা শুরু করলাম। মাঝ পথে সুমন বলল, দাড়া তো দেখি কাহিনী কি! দাড়িয়ে গেলাম। পেছন দিকে তাকিয়ে দেখি সুমন একটা গজারী গাছের পেছনে দাড়িয়ে মাথা একটু বাঁকা করে উকি দিয়ে দেখছে। আমাকে ইশারা করলো, চুপ কোনো কথা বলবি না। আমিও ঠিক একই পজিশনে দাড়িয়ে উকি দিয়ে রইলাম। দেখলাম, জমির ও মুন্না আমাদের গাড়ির ওখানেই দাড়িয়ে আছে। দূর থেকে যে গাড়িটা এদিকে আসছে ওদের দৃষ্টি সেদিকে। গাড়িটা একেবারে কাছাকাছি আসতেই দেখতে পেলাম জমির আর মুন্না দুইজন দুইদিকে দৌড় দিল। আমরা আড়াল থেকে দেখলাম, গাড়িটা ছিল পুলিশের। বুঝলাম ওরা দুইজন পুলিশ বুঝতে পেরেই দৌড় দিয়েছে। পুলিশের গাড়ি চলে যাওয়ার পর জমিরের ফোন পেয়ে এসে দেখলাম ওরা দুজন এমন ভাব করে দাড়িয়ে আছে যেন এতক্ষণ এখানেই দাড়িয়ে ছিল। আমরাও ওদের প্রকাশ করিনি যে আমরা সব দেখেছি। এই দৃশ্য দেখার পর আমাদের আর বুঝতে বাকি রইলো না, বেটারা কতবড় চাপাবাজ। পাঠক আপনারাও নিশ্চই বুঝতে পেরেছেন শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত কি চাপাবাজি গুলোই হজম করলাম।
ঘড়ির কাটায় তখন সাড়ে চারটার মতো বাজে যখন আমরা ঢাকা ফিরতে রওনা করলাম। আমি আর সুমন শেষের ঘটনা মনে করে করে গোটা পথে হাসতে হাসতে বাড়ি পৌছালাম।

হাতুড়ি ডাক্তার আমাদের জাতিয় সম্পদ! অশ্রুসিক্ত হাজার জোড়া চোখ

হাতুড়ি ডাক্তার আমাদের জাতিয় সম্পদ! অশ্রুসিক্ত হাজার জোড়া চোখ

"শিক্ষাই জাতির মেরুদণ্ড" এই প্রবদটা পড়তে পড়তে বড় হয়েছি। ৪র্থ শ্রেণী থেকে শুরু করে ইন্টারমিডিয়েট পর্যন্ত বাংলা বিষয়ের যেন কমন একটা অনুচ্ছেদ। কিন্তু যখন ইন্টারমিডিয়েট পার করে দেশ ও জাতির কার্যক্রমের দিকে চোখ দিলাম তখনই সারা জীবনের পড়াশুনা কেমন যেন ব্যর্থ প্রতিপন্ন হলো। 

মনে হচ্ছে শিক্ষা এই জাতিতে জুতা শেলাই করা মুচির চেয়েও নিম্ন মানের অথবা একজন মেথরের ও তার চেয়ে অধিক মূল্য আছে যতটা মূল্যায়ণ করা হয় শিক্ষার্থীদের। 

সময়ে সময়ে প্রশাসন, জনগন আবার কখনো বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন রুলস্ দ্বারা প্রত্যেহ ধর্ষিত হচ্ছে শিক্ষার্থীরা। প্রশাসন আরো একধাপ এগিয়ে। নিজেদের দলের স্বার্থ হাসিলের লক্ষ্যে চালু করলো বিভিন্ন কোটা। এই কোটা ব্যবস্থা জাতিকে নিয়ে গেছে এক চরম হীনতর অবস্থায়। 

এই কোটা ব্যবস্থার কারণে শাহবাগের চত্বরে দেশের মেধাবী ছাত্রদের উপর পুলিশের গুলি করতে হস্ত কখনোই কম্পিত হয় নাই। 

আবার শিক্ষায় শুরু হলো ভ্যাট। খুব অবাক লাগে যখন উন্নত বিশ্ব স্কলারশীপ দিয়ে মেধাবীদের লালন পালন করে আর আমাদের দেশে শিক্ষার্থীদের উপরে ভ্যাট আরোপ করে। ভ্যাট বিরোধী আন্দোলন জাতির জন্য রেখে গেছে এক চরম নিদর্শন। পুলিশের বন্দুককে সামনে লাল গোলাপ দিয়ে জয় করে নিলেন শিক্ষার্থীরা। দেশের ইতিহাসে এই প্রথম আন্দোলন যা কোন প্রকার গ্রেফতার বা রক্ত বিসর্জন ছাড়াই সফলতা অর্জন করলো শিক্ষার্থীরা।

অপর দিকে বছরের পর বছর ধরে চলে আসছে প্রশ্নপত্র ফাঁস। আর এই পর্যায়ের প্রশাসন নির্লজ্জের মত বক্তব্য দিয়েই চলছে। যেমন ২০১৪ এর ইন্টারমিডিয়েট পরিক্ষা চলাকালে ঢাকা বোর্ডে বেশ কয়েকটি পরিক্ষা স্থগিত পর্যন্ত হয়েছে প্রশ্নপত্র ফাঁসের কারণে অপর দিকে প্রশাসন বলছে "আমাদের আমলে কোন প্রশ্ন ফাঁস হয় না"। ধিক্কার জানাই এরূপ প্রশাসনের জন্য যারা প্র্রশ্নপত্র ফাঁসের বিরুদ্ধে কোন প্রকার ব্যবস্থা না নিয়ে মুখে বড় বড় বুলি আওড়ায়। 

শুধু এসএসসি আর ইন্টারমিডিয়েট ই নয়, পিএসসি,, জেএসসিতেও প্রশ্ন আউট হয় আমাদরে দেশে। তা কত বড় লজ্জাজনক তা হয় তারা বুঝবেনা কারণ তারাতো তাদের লজ্জা ঢেকে রেখেছে টাকার বস্তা দ্বারা।

অত:পর, যখন শুনি মেডিকেল এক্সামের প্রশ্ন আউট হয় তখন সত্যিই নির্বাক হওয়া ছাড়া কিছুই করার থাকে না। একটা জাতির অন্যান্য সেকশন থেকে স্বাস্থ সংক্রান্ত সেকশন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। অথচ আমাদের দেশে এই সেকশনেই বসছে সব অযোগ্য ব্যক্তি। যারা উচ্চ পর্যায়ে অবস্থান করার ফলে টাকার দ্বারা সিড়ি নির্মান করে আরো উচুতে উঠতে চান। 

আপনাদেরকে বলছি শুনুন- "সামান্য হাঁচি বা কাঁশি হলেও নিজের চিকিৎসা করাতে চলে যান সিঙ্গাপুর তাই এদের ডাক্তার হাতুড়ে হুক বা র‌্যান্স তাতে আপনাদের কিছু আসে যায় না। কিন্তু মনে রাখবে এদেশের বাকি ১৮ কোটি মানুষ কিন্তু ঠিকই নির্ভর করতে হয় এই হাতুড়ি ডাক্তারের উপর। আর আপনাদের জন্য ডাক্তারি নামক এই মহান পেশা কলুষিত হচ্ছে। আজ যাদেরকে ১৫লাখ টাকার বিনিময়ে ডাক্তার করে দিচ্ছেন তারা কি ডাক্তার হয়ে জনগনের সেবা করবে ভাবছেন??? 
ইম্পসিবল কখনোই না, তারা কখনোই জনগনের সেবা করবে না। তারা আপনাদের কে যে অর্থ দিয়েছে তার চক্রবৃদ্ধি হারে সুদে আসলে আদায় করে নেবে। আর এ জাতি চিরকাল বাস করবে দারিদ্রসীমার নিচে। আপনারা উপরে বসে বসে দেখবেন তাদের আর্তনাদ এবং নির্লজ্জের মত হাসবেন প্রাণ খুলে। অত:পর, যেদিন আপনার সমাপ্তি ঘটবে তখন প্রভুর কাছে আপনার কার্যে জবাব অবশ্যই দিতে হবে। মনে রাখবেন।"

আজ যারা বাবার টাকার বলে ডাক্তার হচ্ছেন তাদের বলছি শুনুন- "মানুষ ইশ্বরের পর যদি কাউকে বিশ্বাস করে সে হলো ডাক্তার। বাবার টাকার বলে ডাক্তার হচ্ছেন হন কোন সমস্যা নাই। আপনার মাথায় থাকা প্রায় ১.৩-১.৫ পাউন্ড ওজনের ব্রেনটাকে কাজে লাগান। আমি জানি আপনাদের পরিক্ষা আর দ্বিতীয় বার হবে না। কারণ আপনাদের টাকা ভাগ করা হয়ে গেছে। সুতরাং, মেধাহীন নয় মেধাকে ঘর্ষণ করে তার থেকে জ্ঞানের বর্ষণ করেন। আপনারা হলেন হাজার হাজার মেধাবী স্টুডেন্ট এর ভাঙ্গা হৃদয় আর অশ্রু জলের কারণ। আপনাদের জন্য শুভ কামনা ক্যারি অন।"

গত বছর ৬৩.৫স্কোর যারা পেয়েছিলো তাদেরকে পর্যন্ত নিয়েছিল মেবি, আমার ঠিক মনে পড়ছে না। তবে এরকমই হবে স্কোর টা। আজ যারা এই স্কোরটা অতিক্রম করতে পেরেছেন তাদেরকে সহমর্মিতা জানানোর ভাষা আমার নাই। তবে আপনারাই প্রকৃত বিজয়ী। প্রায় দুই হাজার স্টুডেন্ট ৮০-৯০ পাইছে আসলে তারা এই মার্ক পায়নি পেয়েছে তাদের টাকা। যে স্টুডেন্টগুলো ইন্টামিডিয়েটে নাকানি চুবানি খাইছে তারা মাত্র ছয় মাসে এতটা ব্রেনি হয়ে যায়নি যে ৮০-৯০ হাতের তুরিত্পেই য়ে গেছে। আমার সমবেদনা আপনাদের কষ্ট লাঘব করতে পারবে না তাই সমবেদনা জানালাম না। শুধু এতটুকুই শান্তনা দিতে চাই স্বপ্ন ভেঙ্গেছে তাই বলে স্বপ্ন বলে স্বপ্ন দেখবেন না?? নতুন করে স্বপ্ন দেখুন শিখুন। নিজেকে এমন ভাবে গড়ে তুলুন যাতে করে এই ব্যাচের ডাক্তারারই উঠতে বসতে আপনাকে স্যার বলে সম্বোধন করে।

জীবনানন্দ দাসের “কুড়ি বছর পর” পড়ার পর

জীবনানন্দ দাসের “কুড়ি বছর পর” পড়ার পর
পচিশ তিরিশ অথবা
আরও বেশী কিছু বছর পর,
হঠাৎ যদি দেখা হয়
তোমার আমার –
চিনতে কি পারবো আমরা পরষ্পরকে?
একটু কি থামবো, কুশল জানতে?
আনত নয়নে অথবা
চোখে চোখ রেখে বলবো,
“কেমন আছো?”
নাকি, অপরিচিতের মতো
হেটে চলে যাবো
পরিবার সামলানোর ভান করে,
নিজ নিজ গন্তব্যে?

ধরো, যদি দেখা হয়
সেই মানিক মিয়ায়
অথবা সেই সাউথপ্লাজায়
হাই-প্রেশার সোডিয়াম
বাতির সেই বন্যায়?
একবারের জন্যেও কি মনে পড়বে,
চতুষ্কোন কালো কালো
এলুমিনিয়ামের পোস্টে ঝুলে থাকা
সিকি শতাব্দি আগের
সেই হলুদ বাতিগুলোকে?
অদ্ভুত নতুন সেই সব বাতিগুলোকে
যার আলো এক সময়
আমাদের দেহ-মন রাঙিয়ে দিতো
অন্য অন্য রঙে!
এখনও কি সম্ভব সেরকমটা?

মনেপড়ে, আমাদের চিঠিগুলো যে ছিল অন্যরকম।
না, রোজ যে একখানা করে লিখতাম,
সেজন্য না। বরং সেগুলার বিষয়বস্তুর কারনে –
বেশ মিলে যায়,
আজকাল ফেসবুকে জানতে চাওয়া
অতি পরিচিত প্রশ্ন –
“হোয়াটস অন ইওর মাইন্ড”-এর সাথে।

আগে থেকে খুব কিছু ভেবে যে লিখতাম
তা না, না তুমি? না আমি?
আর তাই তোমার পক্ষে সম্ভব হয়েছিল
সেইসব ষোল কম এক হাজার চিঠি লিখাটা।
আমি কতগুলো লিখেছিলাম,
জানা হয়নি কখনো।
তবে কাছাকাছিই হবে বোধহয়,
হয়তো দু’চারখানা কম বা বেশী –
এখনো ফেসবুকের বা ব্লগের পাতায়
মনের খুশিতে যা ইচ্ছা তাই লিখতে বসে
ফিরে ফিরে যাই সেই সব
ইচ্ছে ঘোড়া ছুটিয়ে লিখালিখির সময়।

যদি আমাদের দেখা হয়ে যায়
ফেসবুকে, ব্লগে অথবা
অন্য কোন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে,
এখনো কি সেই ইচ্ছে ঘোড়ায়
ছুটতে পারবো তুমি আর আমি?
একসাথে?

আমাদের বোধহয় দেখা হবে না আর –
আর হলেও তা হবে,
এতটা অপরিচিতের মত
যে তা নিয়ে কাব্য করাই ঢের ভাল
সত্যিকারের দেখা হবার চেয়ে……

দারিদ্র্যের হার শূন্যের কোটায় আনার লক্ষ্য বিশেষ পরিকল্পনা সরকারের

দারিদ্র্যের হার শূন্যের কোটায় আনার লক্ষ্য বিশেষ পরিকল্পনা সরকারের
আগামী ২০৩০ সালের মধ্যে দারিদ্র্যের হার শূন্যের কোটায় নামানোসহ ১৭টি কৌশল নির্ধারণ করা হয়েছে। এ নিয়ে আগামী ২৫ সেপ্টেম্বর নিউইয়র্কে জাতিসংঘের প্রধান কার্যালয়ে শুরু হচ্ছে তিন দিনব্যাপী টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য (এসডিএস) সামিট। ওই সামিটে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ বিশ্বের ১৫০ রাষ্ট্রপ্রধান ওই সামিটে অংশগ্রহণ করবেন।এসডিএসের প্রধান লক্ষ্য হচ্ছে আগামী পনেরো বছরের মধ্যে দারিদ্র্যের হার শূন্যের কোটায় নামিয়ে আনা। এ কর্মপরিকল্পনার সঙ্গে ১৯৩টি দেশ একমত হয়েছে। এদিকে বাংলাদেশ সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্য (এমডিজি) অর্জনে বেশ সফল হয়েছে। এমডিজির বেঁধে দেয়া লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি দারিদ্র্যের হার কমেছে বাংলাদেশে। ২০১৫ সালে বাংলাদেশের দারিদ্র্যের হার হচ্ছে ২৪ দশমিক ৮ শতাংশ।১৯৯৭ সালে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, দারিদ্র্য, শিশু, নারী, ক্ষুধার সূচক অর্জনে লক্ষ্যমাত্রা বেঁধে দেয়। বাংলাদেশ এসব লক্ষ্যমাত্রা সফলতার সঙ্গে অর্জন করেছে। গত পনেরো বছরে দারিদ্র্যের হার যেভাবে কমেছে তা অব্যাহত থাকলে আগামীতে আমরা এসডিজির লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে পারব।দারিদ্র্য বিমোচন করতে হলে কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে হবে। যা বেসরকারি খাতের মাধ্যমে সম্ভব। দারিদ্র্যের হার কমানোর লক্ষ্যমাত্রা চলতি বছরে ৮ শতাংশ ছিল। সেখানে ৬ দশমিক ৫ শতাংশের নিচে নেমে এসেছে। পর্যায়ক্রমে এ হার শূন্যের কোটায় নেমে আসুক, দেশ উন্নত বিশ্বের কাতারে সামিল হবে এটাই সবার প্রত্যাশা।

পরীক্ষামূলক


ছিল তিন কন্যা । সিমুল, বকুল, ও পারুল । তিন কন্যাকে নিয়া রাজা বেশ সুখেই কাটছিল । রাজ্যও ছিল সুখ আর শান্তি । রাজা একদিন গল্প করছিলেন । সঙে ছিল রানি আর তিন কন্যা । রাজা তার কন্যাদের জিজ্ঞেস করলেন, এক সহজ প্রশ্ন । কে তাকে কি রকম ভালবাসেন? বর কন্যা শিমুল । সেই জবাব দিল প্রথমে । বলল, বাবা, আমি তোমাকে চিনির মত ভালবাসি । রাজা একটু মুচকি হাসলেন । মেজ কন্যা বকুল বলল, বাবা, আমি তোমাকে মিষ্টির মত ভালবাসি । রাজার মুখে আবার আবার দেখা গেল হাসির রেখা । ছোট কন্যা পারুল । বলল, বাবা আমি তোমাকে নুনের মত ভালবাসি । সঙ্গে সঙ্গে রাজার মুখ হয়ে গেল কালো । রানি ও শুনে অবাক । এ কেমন কথা । রাজা বেশ অস্থির । ডাকলেন উজির নাজির আর সেনাপতিকে । হকুম দিলেন, ছোট কন্যা পারুলকে গভীর জঙ্গলে ফেলে দিয়া আস । রাজার হুকুম বলে কথা । না মেনে উপাই নেহি ।পরদিন পারুলকে পাঠানো হল বনবাসে । গভির অরণ্য জনপ্রাণী নেই । পারুল একা বসে আছে । এমন সময় কয়েকজন পরি এল । পরিরা বলল, গভীর অরেন্নে তুমি একা কেন? পারুল সব ঘটনা খুলে বলল । পারুলের দুঃখের কথা পরিরা বুঝতে পারল । রাজার মেয়ে পারুলের জন্য সুন্দর একটা বাড়ি বানাল । পরিরা নানা ফুলেত চারা এনে একটা বাগান বানাল । বনের পশুপাখি এলো রাজার মেয়েকে দেখতে । হরিন এলো খরগোশ এল মুউ

রাজা আর তিন কন্যা

রাজা আর তিন কন্যা
অনেক অনেক দিন আগের কথা ।এক ছিল রাজা । রাজার ছিল এক রানি । আর ছিল তিন কন্যা । সিমুল, বকুল, ও পারুল । তিন কন্যাকে নিয়া রাজা বেশ সুখেই কাটছিল । রাজ্যও ছিল সুখ আর শান্তি । রাজা একদিন গল্প করছিলেন । সঙে ছিল রানি আর তিন কন্যা । রাজা তার কন্যাদের জিজ্ঞেস করলেন, এক সহজ প্রশ্ন । কে তাকে কি রকম ভালবাসেন? বর কন্যা শিমুল । সেই জবাব দিল প্রথমে । বলল, বাবা, আমি তোমাকে চিনির মত ভালবাসি । রাজা একটু মুচকি হাসলেন । মেজ কন্যা বকুল বলল, বাবা, আমি তোমাকে মিষ্টির মত ভালবাসি । রাজার মুখে আবার আবার দেখা গেল হাসির রেখা । ছোট কন্যা পারুল । বলল, বাবা আমি তোমাকে নুনের মত ভালবাসি । সঙ্গে সঙ্গে রাজার মুখ হয়ে গেল কালো । রানি ও শুনে অবাক । এ কেমন কথা । রাজা বেশ অস্থির । ডাকলেন উজির নাজির আর সেনাপতিকে । হকুম দিলেন, ছোট কন্যা পারুলকে গভীর জঙ্গলে ফেলে দিয়া আস । রাজার হুকুম বলে কথা । না মেনে উপাই নেহি ।পরদিন পারুলকে পাঠানো হল বনবাসে । গভির অরণ্য জনপ্রাণী নেই । পারুল একা বসে আছে । এমন সময় কয়েকজন পরি এল । পরিরা বলল, গভীর অরেন্নে তুমি একা কেন? পারুল সব ঘটনা খুলে বলল । পারুলের দুঃখের কথা পরিরা বুঝতে পারল । রাজার মেয়ে পারুলের জন্য সুন্দর একটা বাড়ি বানাল । পরিরা নানা ফুলেত চারা এনে একটা বাগান বানাল । বনের পশুপাখি এলো রাজার মেয়েকে দেখতে । হরিন এলো খরগোশ এল মুউ

ফাল্গুনের দাগকাটা

ফাল্গুনের দাগকাটা
আলমগীর সরকার লিটন

গতকাল মিটিমিটি জ্বলোকময়
চাঁদতারা জ্বলছিল এ রাত
হাঠৎ কোন এক সময় কেন?
কালবৈশাখী ঝড় বয়েদিলো আর্তনাদ;

সাড়া রাত বৃষ্টি বাদল ঝরেছিল
নিদ্রা সুখের বাঁলিশের দু’পাশ
ভেজে ভেজে ঐ পুকুরের নেয়ছিল।
শুধু নিশিচর হইয়ে পাঁজর কম্পণ;

ফাল্গুনে বিদ্যুৎ ঝলকাণির আঘাত
পুড়ে হয়ে ছাই থাকল!কালো দাগ
মুছবে না ব্যথার ভরা অনুরাগ;
ধোঁয়াশার আঁধারে স্মৃতির যে বাগ।